Saturday 14 May 2016

চৈতন্যজীবনী সাহিত্য


একটি জীবন জীবনী হয়ে ওঠে জীবনের পরিপূর্ণতায়, অসাধারণ জীবনমাহাত্ম্যে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রথম জীবিত বাঙালি যাঁর জীবৎকালেই বৈষ্ণব ভক্তেরা তাঁর অলৌকিক ও দেবোপম জীবন অবলম্বন করে সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় জীবনচরিত রচনায় প্রয়াসী হন।দাক্ষিণাত্য ভ্রমণ শেষে পুরীতে প্রত্যাগত শ্রীচৈতন্যকে পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌম ঈশ্বরভাবে বন্দনা করেন, রায় রামানন্দ তাঁকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করেন। জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনে প্রবীণ অদ্বৈতাচার্য বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দসহ হরিনামের পরিবর্তে চৈতন্যনাম সংকীর্তন করেন। স্বরূপ দামোদর তাঁকে বৃন্দাবনের রাধাকৃষ্ণের দ্বৈতভাবের একাত্মরূপ বলে প্রতিপন্ন করেন।

চরিত লেখকগণ চৈতন্যের চারিত্রিক মাহাত্ম্যে বিমুগ্ধ হয়ে তাঁকে দেবতা জ্ঞান করে ভক্তিপ্লুত চিত্তে তাঁর জীবনী লিখতে প্রবৃত্ত হন।তাই এই গ্রন্থনিচয়কে জীবন চরিত না বলে চরিত কাব্য বলাই সঙ্গত। মুরারি গুপ্ত সংস্কৃত ভাষায় সর্বপ্রথম ধারাবাহিক ভাবে চৈতন্যজীবনী লেখেন, যা ‘মুরারি গুপ্তের কড়চা’ নামে পরিচিত। মুরারির পর কবিকর্ণপুর পরমানন্দ সেন চৈতন্যের জীবনকথা লেখেন সংস্কৃত ‘চৈতন্য চরিতামৃত’ কাব্যে (১৫১২ খ্রি.)। মুরারি গুপ্ত ও কবি কর্ণপুর রচিত চৈতন্য জীবন কাহিনি অবলম্বনে পরবর্তী লেখকগণ বহুসংখ্যক চৈতন্য জীবনী রচনা করেছেন।

যেমন, বাংলা ভাষায় প্রথম চৈতন্য চরিত রচনা করেন বৃন্দাবন দাস, যা ‘চৈতন্য ভাগবত’ (আনুমানিক ১৫৪০-৫০ খ্রি.) নামে খ্যাত।এছাড়া কৃষ্ণদাস কবিরাজের‘ চৈতন্য চরিতামৃত’(আনুমানিক১৬১৬খ্রি.),লোচন দাসের‘চৈতন্য মঙ্গল’(আনুমানিক১৫৬০-৭০খ্রি.), জয়ানন্দের‘চৈতন্যমঙ্গল’(আনুমানিক১৫৬০খ্রি.)বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। তবে চৈতন্য চরিত কাব্যগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় দুটি চরিত গ্রন্থ হল বৃন্দাবন দাসের ‘চৈতন্য ভাগবত’ ও কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘চৈতন্য চরিতামৃত’।চৈতন্য ভাগবত:বাংলা চরিত সাহিত্যের পথ প্রদর্শক‘চৈতন্য ভাগবত’ গ্রন্থটির পূর্বনাম ছিল ‘চৈতন্য মঙ্গল’। জননী নারায়ণীর নির্দেশে বৃন্দাবন দাস এর নাম রাখেন ‘চৈতন্য ভাগবত’। কবি ভাগবতের কৃষ্ণলীলার অনুসরণে তাঁর গ্রন্থে চৈতন্য লীলা বর্ণনা করেছেন। বৃন্দাবনের ষড় গোস্বামী ও বৈষ্ণব সমাজ বৃন্দাবন দাসকে ব্যাসরূপে স্বীকৃতি দেন আর তাঁর গ্রন্থকে ‘চৈতন্য ভাগবত’ নামেই অভিহিত করেন-ভাগবতে কৃষ্ণলীলা বর্ণিল বেদব্যাস। চৈতন্য মঙ্গলে ব্যাস বৃন্দাবন দাস। কৃষ্ণদাস কবিরাজ মহাপ্রভুর তিরো ভাবের অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বৃন্দাবন তাঁর দীক্ষাগুরু নিত্যানন্দের আদেশে ও মাতা নারায়ণীর প্রেরণায় আনুমানিক১৫৪০-৫০খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গ্রন্থটি রচনা করেন। বৃন্দাবন দাসের ব্যক্তি পরিচয় বিশেষ কিছু জানা যায় না।তিনি চৈতন্যভক্ত শ্রীবাসের ভ্রাতুষ্পুত্রী নারায়ণীর পুত্র এইটুকুই তাঁর সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। বৃন্দাবন চৈতন্যকে প্রত্যক্ষ করেননি, তথাপি চৈতন্য ভাগবতে চৈতন্য জীবনের অনেক প্রামাণিক তথ্য পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এটি বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখ যোগ্য সাহিত্য কীর্তিও বটে।

চৈতন্য ভাগবত আদি, মধ্য ও অন্ত্য – এই তিন ভাগে বিভক্ত।আদিখণ্ডে গৌরাঙ্গের জন্ম, বাল্যলীলা, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা, বিবাহ, গয়াগমন প্রভৃতি নানা ঘটনার সমাবেশ হয়েছে। মধ্যখণ্ডে গৌরাঙ্গের নবদ্বীপলীলা, সন্ন্যাসগ্রহণ এবং অন্ত্যখণ্ডে নীলাচলে গমন, ভক্তসঙ্গে মিলন ও সেখানকার লীলাদির আংশিক বিবরণ মেলে।অন্ত্যখণ্ডটি অতিসংক্ষিপ্ত। চৈতন্য জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা প্রসূত অনেক ঘটনা বৃন্দাবন দাস যথাযথ ও অনুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করেছেন। যে অংশ তাঁর কল্পনাপ্রসূত, তা তিনি সংক্ষিপ্ত করেছেন। যেমন, মহাপ্রভুর গৌড়ভ্রমণ বৃত্তান্ত যথেষ্ট তথ্যবহুল, কিন্তু বাল্যলীলা অংশ ভক্তিভাব ও কল্পনায় আবেগঋদ্ধ। কিছু কিছু স্থানে আবেগের আতিশায্য চোখে পড়লেও, সমকালীন চৈতন্য ঐতিহ্যের একটি অখণ্ড তথ্যচিত্র বৃন্দাবন দাসের চৈতন্য ভাগবত।সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হল এই গ্রন্থের ঐতিহাসিক মূল্য। ষোড়শ শতাব্দীর নবদ্বীপ তথা গৌড়বাংলার রাজনৈতিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় অবস্থা অত্যন্ত বাস্তবানুগ ভাষায় বিবৃত হয়েছে চৈতন্যভাগবতে।সেকালের নবদ্বীপ স্মৃতি ও নব্যন্যায়ের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে –নানা দেশ হৈতে লোক নবদ্বীপে যায়। নবদ্বীপ পড়িলে সে বিদ্যারস পায়।ঐশ্বর্যবৈভবেও নবদ্বীপ খ্যাতি অর্জন করেছিল। ব্রাহ্মণরা ছিল সমাজের নিয়ন্ত্রক। জাতিভেদ প্রথা উৎকটরূপে প্রকট ছিল। তান্ত্রিক ও শাক্তধর্মের ছিল জয়জয়কার। সমাজের লোক স্থূল ভোগবিলাসে জীবন অতিবাহিত করত।বাংলার সুলতান হুসেন শাহের রাজত্বকালের বেশ কিছু তথ্য রয়েছে এই গ্রন্থে। বৃন্দাবন দাস সচেতনভাবেই চৈতন্যভাগবতে ইতিহাসের বহু উপাদানের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন। তবে এর সাহিত্যগুণও আমাদের মুগ্ধ করে। জীবনীসাহিত্যের দ্বার উদ্ঘাটন করে মানুষের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার কাজে বৃন্দাবন দাসই ছিলেন পথিকৃৎ। এক দেবোপম চরিত্রকে অবলম্বন করে তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপ বাংলা সাহিত্যের একটি নতুন শাখার জন্ম দিয়েছে। স্বর্গ থেকে মর্ত্যের দিকে বৃন্দাবন দাস এই সাহিত্যগঙ্গার মন্দাকিনী ধারা প্রবাহিত করেছেন। ভক্তিরস ও অলৌকিকত্ব থাকলেও কাব্যটি দার্শনিকতার ভারে ভারাক্রান্ত হয়নি। কৃষ্ণদাস কবিরাজ যথার্থই বলেছেন মনুষ্যরচিত নারে ঐছে গ্রন্থ ধন্য। বৃন্দাবন দাস মুখে বক্তা শ্রীচৈতন্য। 

চৈতন্যচরিতামৃত:কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ শ্রেষ্ঠ চৈতন্যজীবনী। অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী কৃষ্ণদাস কবিরাজ চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের খুঁটিনাটি তথ্য সহ জীবন-ইতিহাস রচনায় প্রবৃত্ত হন এবং চৈতন্যজীবনের প্রেক্ষাপটে গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের ব্যাখ্যা ও বিচার বিশ্লেষণ করেন। ব্যক্তি চৈতন্যের আদর্শ ও তাঁর প্রবর্তিত ভক্তিধর্মের স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়েছে এই বইতে। মধ্যযুগের অন্য কোনো কাব্য বিষয় মাহাত্ম্যে, অকৃত্রিমতায়, তথ্যনিষ্ঠায়, সরল প্রাঞ্জল বাক্যগুণে, দর্শন, ইতিহাস ও কাব্যের অভূতপূর্ব সমন্বয়ে এমন গৌরব অর্জন করতে পারেনি। বৈষ্ণবধর্মের একটি আকর গ্রন্থ হিসেবেও তাই চৈতন্যচরিতামৃতের মূল্য অনস্বীকার্য। চৈতন্যচরিতামৃতের মূল প্রতিপাদ্য চৈতন্যের জীবনচরিত নয় প্রেম ও ভক্তিরসের যে বিগ্রহরূপে চৈতন্যদেব আরাধ্য সেই চরিতামৃতের এবং সেই প্রেম ও ভক্তিবাদের ব্যাখ্যান।চৈতন্যের জীবনী অপেক্ষা যুক্তিতর্ক দিয়ে বৈষ্ণব দর্শনের প্রতিষ্ঠাই ছিল কৃষ্ণদাসের লক্ষ্য। এই দুরূহ তত্ত্ব তিনি ব্যাখ্যা করেছেন দার্শনিকের মতো। চৈতন্যচরিতামৃত আদি, মধ্য ও অন্ত্য এই তিনটি লীলাপর্বে বিভক্ত। প্রতিটি লীলা আবার কয়েকটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত।আদি লীলায় বৈষ্ণবীয় দর্শন, চৈতন্যাবতারের প্রয়োজনীয়তা, নিত্যানন্দের সঙ্গে মহাপ্রভুর পরিচয়, চৈতন্যের বাল্যলীলা, কৈশোর ও সন্ন্যাস বর্ণিত হয়েছে।

আদিলীলাই চৈতন্যচরিতামৃতের প্রধান অংশ। কৃষ্ণদাস শ্রদ্ধাবনত চিত্তে বৃন্দাবন দাসকে অনুসরণ করেছেন নবদ্বীপ লীলা বর্ণনায়। কারণ নবদ্বীপলীলার ব্যাস বৃন্দাবন দাস।শ্রীমদ্ভাগবত, গীতা, ব্রহ্মসংহিতা প্রভৃতি নানা শাস্ত্রসমুদ্রে ডুব দিয়ে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সহ গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রতিষ্ঠাভূমি তৈরি করলেন কৃষ্ণ দাস কৃষ্ণ ভজনে নাই জাতিকুলাদি বিচার। মধ্যলীলায় আছে সন্ন্যাস গ্রহণের পর মহাপ্রভুর নীলাচলে অবস্থান পর্যন্ত ছয় বছরের কথা। এই অংশ কৃষ্ণদাস গ্রহণ করেছেন বৃন্দাবন দাস, মুরারি গুপ্ত ও কবি কর্ণপুরের সংস্কৃত গ্রন্থ থেকে।অন্ত্যলীলায় চৈতন্যদেবের নীলাচলের শেষ সতেরো-আঠারো বছরের লীলা বর্ণিত হয়েছে। সেই সময়কার কথা বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবতে স্থান পায়নি। এই সময়ে মহাপ্রভুর দিব্যোন্মাদ অবস্থা। এই লীলাবর্ণনায় কি তত্ত্ববিশ্লেষণে, কি তথ্যনিষ্ঠায়, কি আপনার ভাবমাহাত্ম্যে কৃষ্ণদাস অভাবনীয় সার্থকতা লাভ করেছেন। তাঁর কাব্য বৈষ্ণব দর্শনকে উপলব্ধি করার দর্পণ স্বরূপ। পরিমিত বাক্য বিন্যাস, ভক্তি তন্ময়তা ও অলংকারের সমন্বয়ে চৈতন্য চরিতামৃত দর্শন ও কাব্যের মুক্তবেণী রচনা করেছে। অচিন্ত্য ভেদাভেদ তত্ত্ব, সাধ্যসাধন তত্ত্ব, রাগানুগা ভক্তি, সখিসাধনা ও রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক জটিল ধর্মতত্ত্বকে কৃষ্ণদাস উপমা, সুভাষিত ও ছন্দের ব্যবহারে সহজবোধ্য করে তুলেছেন। রাধাকৃষ্ণের যুগলতত্ত্বের স্বরূপ রাধাকৃষ্ণ ঐছে সদা একই স্বরূপ।লীলারস আস্বাদিতে ধরে দুই রূপ। কাম ও প্রেমের পার্থক্য বিচার –আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা তারে বলি কাম। কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা ধরে প্রেম নাম। কৃষ্ণপ্রেমের স্বরূপ –কৃষ্ণপ্রেম সুখ সিন্ধু পাই তার এক বিন্দু সেই বিন্দু জগৎ ডুবায়।
রাধাকৃষ্ণ তত্ত্বের এমন সরল ও নিপূণ ব্যাখ্যা অন্য কোথাও দুর্লভ সচ্চিৎ আনন্দময় কৃষ্ণের স্বরূপ। এতএব স্বরূপ শক্তি হয় তিন রূপ। আনন্দাংশে হ্লাদিনী সদংশে সন্ধিনী। চিদংশে সম্বিৎ যারে জ্ঞান করি মানী।বৈষ্ণব মতে, এই সম্বিৎ, আনন্দ এবং সৎ একত্রে ‘মহাভাব’ রূপে উদ্গত হলে কৃষ্ণপ্রেমের উদ্ভব ঘটে। রাধা হলেন সেই মহাভাব স্বরূপিনী।


কৃষ্ণদাস লিখেছেন সেই মহাভাবরূপা রাধা ঠাকুরানী। কৃষ্ণপ্রেমের গঙ্গাজলে বিধৌত ভক্তকবি কৃষ্ণদাসের নির্মল, স্বচ্ছ, সুন্দর, পবিত্র ও মহৎ হৃদয়ের স্বরূপটি সুপরিস্ফুট এই গ্রন্থে।তিনি প্রাঞ্জল ভাষায়, পয়ার-ত্রিপদী ছন্দে দুরূহ জটিল তত্ত্ব উদ্ঘাটন করেছেন। বাংলা সাহিত্যের বিবর্তনে ও বিকাশে চৈতন্যচরিতামৃত একখানি অমূল্য গ্রন্থ।ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা হচ্ছে ভগবৎ বিরহে হরিভজন। এইভাবে ভগবৎ সান্নিধ্য আরো নিবিড়ভাবে লাভ হয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর এই জগৎ থেকে কৃষ্ণ তাঁর লীলা সংবরণ করলে কৃষ্ণ বিরহে শোকাকুল কৃষ্ণ পার্ষদ উদ্ধব ভগবানের লীলাবিলাসসমূহ স্মরণ করে বিদুরের কাছে বর্ণনা করেছিলেন।
ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংস পরি বাজ্রকাচার্য শ্রীল অভয় চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই তথ্য খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করে গিয়েছেন। উদ্ধব ছিলেন নিত্যসিদ্ধ কৃষ্ণভক্ত। বাল্যকাল থেকেই তিনি কৃষ্ণমূর্তি নিয়ে খেলা করতেন। এইভাবে জন্ম থেকেই তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত কৃষ্ণভক্তি ছিল। সেই কৃষ্ণমূর্তিকে পোশাক পরানো, ভোগ নিবেদন করা, তাঁর পূজা করা–সবই তিনি করতেন। এইটি হচ্ছে নিত্যমুক্ত ভক্তের লক্ষণ; এঁরা কখনও ভগবানকে ভুলতে পারেন না।এইভাবে শৈশবে উদ্ধব সব সময়ই কৃষ্ণমূর্তি সেবায় তন্ময় হয়ে থাকতেন। পাঁচ বছর বয়সে তাঁর মা তাঁকে প্রাতঃরাশের জন্য ডাকলেও কৃষ্ণসেবায় নিযুক্ত থাকায়, তিনি তা নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
ভগবদ্গীতায় উল্লেখ করা হয়েছে, শুচীনাং শ্রীমতাং গেহে যোগ ভ্রষ্টোহভিজায়তে “ভজনে উন্নত ব্যক্তি পরবর্তী জীবনে দিব্যজ্ঞান প্রাপ্ত পরিবারে জন্মগ্রহণের সুযোগ লাভ করে। এইভাবে উদ্ধব শৈশব থেকেই অবিরামভাবে ভগবান কৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত ছিলেন।শেষ বয়স পর্যন্ত তাঁর কৃষ্ণসেবা অব্যাহত ছিল। বিদুর উদ্ধবকে কৃষ্ণ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে, উদ্ধবের তক্ষুণি ভগবান কৃষ্ণের সমস্ত কথা স্মরণ হতে লাগল।

কৃষ্ণ স্মরণ হতেই তিনি ভগবদ্ভাবে অভিভূত হয়ে পড়লেন, এক মুহূর্তের জন্য তিনি নির্বাক হয়ে পড়লেন।ভগবৎ ভক্তিতে আপ্লুত উদ্ধব কৃষ্ণ চরণ কমল স্মরণ করে আবিষ্ট হয়ে ভাবের গভীর থেকে আরো গভীরে নিমজ্জিত হলেন। তাঁর দেহ বিবর্ণ হয়ে পড়ল, তাঁর দুচোখ বেয়ে অবিরল ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। বিদুর দেখলেন উদ্ধবের মধ্যে দিব্য ভগবৎ-প্রেমের সকল লক্ষণসমূহ। তখন উদ্ধব এই বাহ্য জগতের সব কথা ভুলে গিয়েছিলেন।তিনি অশ্রু মোচন করে বিদুরকে ভগবান কৃষ্ণের কথা বলতে লাগলেন। ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ মন্তব্য করেছেন যে, শুদ্ধ ভক্ত এই দেহে অবস্থান কালেও সর্বদাই ভগবদ্ধামে বিরাজমান।

কৃতজ্ঞতা : ইন্টারনেট

0 comments