Wednesday, 25 May 2016

শ্রীশ্রীদুর্গার অষ্টোত্তর শতনাম (মূল সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ)



ঈশ্বর উবাচ

শতনাম প্রবক্ষ্যামি শৃণুষ্ব কমলাননে।
যস্য প্রসাদমাত্রেণ দুর্গা প্রীতা ভবেৎ সতী।।১।।
ওঁ সতী সাধ্বী ভবপ্রীতা ভবানী ভবমোচনী।
আর্য্যা দুর্গা জায়া আদ্যা ত্রিনেত্রা শূলধারিণী।।২।।
পিনাকধারিণী চিত্রা চন্দ্রঘণ্টা* মহাতপা।
মনোবুদ্ধিরহঙ্কারা চিত্তরূপা চিতা চিতিঃ।।৩।।
সর্ব্বমন্ত্রময়ী সত্যা সত্যানন্দস্বরূপিণী।
অনন্তা ভাবিনী ভাব্যা ভব্যাঽভব্যা সদাগতিঃ।।৪।।
শাম্ভবী দেবমাতা চ চিন্তা রত্নপ্রিয়া সদা।
সর্ব্ববিদ্যা দক্ষকন্যা দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী।।৫।।
অপর্ণানেকবর্ণা চ পাটলা পাটলাবতী।
পট্টাম্বরপরিধানা কলমঞ্জীররঞ্জিনী।।৬।।
অমেয়বিক্রমা ক্রূরা সুন্দরী পুরসুন্দরী।
বনদুর্গা চ মাতঙ্গী মতঙ্গমুনিপূজিতা।।৭।।
ব্রাহ্মী মাহেশ্বরী চৈন্দ্রী কৌমারী বৈষ্ণবী তথা।
চামুণ্ডা চৈব বারাহী লক্ষ্মীশ্চ পুরুষাকৃতিঃ।।৮।।

বিমলোৎকর্ষিণী জ্ঞানা ক্রিয়া সত্যা চ বুদ্ধিদা।
বহুলা বহুলপ্রেমা সর্ব্ববাহনবাহনা।।৯।।
শুম্ভনিশুম্ভহননী মহিষাসুরমর্দ্দিনী।
মধুকৈটভহন্ত্রী চ চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনী।।১০।।
সর্ব্বাসুরবিনাশা চ সর্ব্বদানবঘাতিনী।
সর্ব্বশাস্ত্রময়ী সত্যা** সর্ব্বাস্ত্রধারিণী।।১১।।
অনেকশস্ত্রহস্তা চ অনেকাস্ত্রধারিণী।
কুমারী চৈককন্যা চ কৈশোরী যুবতী যতিঃ।
অপ্রৌঢ়া চৈব প্রৌঢ়া চ বৃদ্ধমাতা বলপ্রদা।।১২।।
মহোদরা মুক্তকেশী ঘোররূপা মহাফলা।।১৩।।
অগ্নিজ্বালা রৌদ্রমুখী কালরাত্রিস্তপস্বিনী।।১৪।।
নারায়ণী ভদ্রকালী বিষ্ণুমায়া জলোদরী।।১৫।।
শিবদূতী করালী চ অনন্তা পরমেশ্বরী।
কাত্যায়নী চ সাবিত্রী প্রত্যক্ষা ব্রহ্মবাদিনী।।১৬।।
য ইদং প্রপঠেন্নিত্যং দুর্গানামশতাষ্টকম্।
নাসাধ্যং বিদ্যতে দেবি ত্রিষু লোকেষু পার্ব্বতি।।১৭।।
ধনং ধান্যং সুতং জায়াং হয়ং হস্তিনমেব চ।
চতুরঙ্গং*** তথা চান্তে লভেন্মুক্তিঞ্চ শাশ্বতীম্।।১৮।।
কুমারীং পূজয়িত্বা তু ধ্যাত্বা দেবীং সুরেশ্বরীম্।
পূজয়েৎ পরয়া ভক্ত্যা পঠন্নামশতাষ্টকম্।।১৯।।
তস্য সিদ্ধির্ভবেদ্দেবি সর্ব্বৈঃ সুরবরৈরপি।
রাজানো দাসতাং যান্তি রাজ্যশ্রিয়মবাপ্নুয়াৎ।।২০।।
গোরোচনালক্তককুঙ্কুমেন সিন্দুরকর্পূরমধুত্রয়েণ।
বিলিখ্য যন্ত্রং বিধিনা বিধিজ্ঞো ভবেৎ সদা ধারয়িতে পুরারিঃ।।২১।।
ভৌমাবাস্যানিশাভাগে চন্দ্রে শতভিষাং গতে।
বিলিখ্য প্রপঠেৎ স্তোত্রং স ভবেৎ সম্পদাং পদম্।।২২।।
ইতি বিশ্বসারতন্ত্রে দুর্গাশতনামস্তোত্রং সমাপ্তম্।


* পাঠান্তরে যমঘণ্টা

** পাঠান্তরে নিত্যা

*** পাঠান্তরে চতুর্ব্বর্গম্


বঙ্গানুবাদ

ঈশ্বর বললেন, হে কমলাননা, এখন অষ্টোত্তর-শতনাম বলছি, যে অষ্টোত্তর-শতনামের প্রসাদে সতী দুর্গা সন্তুষ্ট হন, সেই শতনামস্তব শ্রবণ করো:

(১) সতী, (২) সাধ্বী, (৩) ভবপ্রীতা, (৪) ভবানী, (৫) ভবমোচনী, (৬) আর্য্যা, (৭) দুর্গা, (৮) জয়া, (৯) আদ্যা, (১০) ত্রিনেত্রা, (১১) শূলধারিণী, (১২) পিনাকধারিণী, (১৩) চিত্রা, (১৪) চন্দ্রঘণ্টা, (১৫) মহাতপা, (১৬) মনঃ, (১৭) বুদ্ধি, (১৮) অহঙ্কারা, (১৯) চিত্তরূপা, (২০) চিতা, (২১) চিতি, (২২) সর্বমন্ত্রময়ী, (২৩) নিত্যা, (২৪) সত্যানন্দস্বরূপিণী, (২৫) অনন্তা, (২৬) ভাবিনী, (২৭) ভাব্যা, (২৮) ভব্যা, (২৯) অভব্যা, (৩০) সদাগতি, (৩১) শাম্ভবী, (৩২) দেবমাতা, (৩৩) চিন্তা, (৩৪) রত্নপ্রিয়া, (৩৫) সর্ববিদ্যা, (৩৬) দক্ষকন্যা, (৩৭) দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী, (৩৮) অপর্ণা, (৩৯) অনেকবর্ণা, (৪০) পাটলা, (৪১) পাটলাবতী, (৪২) পট্টাম্বরপরিধানা, (৪৩) কলমঞ্জীররঞ্জিনী, (৪৪) অমেয়বিক্রমা, (৪৫) ক্রূরা, (৪৬) সুন্দরী, (৪৭) সুরসুন্দরী, (৪৮) বনদুর্গা, (৪৯) মাতঙ্গী, (৫০) মতঙ্গমুনিপূজিতা, (৫১) ব্রাহ্মী, (৫২) মাহেশ্বরী, (৫৩) ঐন্দ্রী, (৫৪) কৌমারী, (৫৫) বৈষ্ণবী, (৫৬) চামুণ্ডা, (৫৭) বারাহী, (৫৮) লক্ষ্মী, (৫৯) পুরুষাকৃতি, (৬০) বিমলা, (৬১)উৎকর্ষিণী, (৬২) জ্ঞানা, (৬৩) ক্রিয়া, (৬৪) সত্যা, (৬৫) বুদ্ধিদা, (৬৬) বহুলা, (৬৭) বহুলপ্রেমা, (৬৮) সর্ববাহনবাহনা, (৬৯) নিশুম্ভনিশুম্ভহননী, (৭০) মহিষাসুরমর্দিনী, (৭১) মধুকৈটভহন্ত্রী, (৭২) চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনী, (৭৩) সর্বাসুরবিনাশা, (৭৪) সর্বদানবঘাতিনী, (৭৫) সর্বশাস্ত্রময়ী, (৭৬) সত্যা, (৭৭) সর্বাস্ত্রধারিণী, (৭৮) অনেকশস্ত্রহস্তা, (৭৯) অনেকাস্ত্রধারিণী, (৮০) কুমারী, (৮১) কন্যা, (৮২) কৈশোরী, (৮৩) যুবতী, (৮৪) যতি, (৮৫) অপ্রৌঢ়া, (৮৬) প্রৌঢ়া, (৮৭) বৃদ্ধমাতা, (৮৮) বলপ্রদা, (৮৯) মহোদরী, (৯০) মুক্তকেশী, (৯১) ঘোররূপা, (৯২) মহাবলা, (৯৩) অগ্নিজ্বালা, (৯৪) রৌদ্রমুখী, (৯৫) কালরাত্রি, (৯৬) তপস্বিনী, (৯৭) নারায়ণী, (৯৮) ভদ্রকালী, (৯৯) বিষ্ণুমায়া, (১০০) জলোদরী, (১০১) শিবদূতী, (১০২) করালী, (১০৩) অনন্তা, (১০৪) পরমেশ্বরী, (১০৫) কাত্যায়নী, (১০৬) সাবিত্রী, (১০৭) প্রত্যক্ষা এবং (১০৮) ব্রহ্মবাদিনী।

এই একশো আটটি নাম নিয়ে ‘দুর্গানামশতাষ্টক’ বা দুর্গার অষ্টোত্তর-শতনাম হয়েছে। এই অষ্টোত্তরশতনাম যে প্রতিদিন সম্যকরূপে পাঠ করতে পারে, হে পার্বতী, ত্রিভুবনে তার অসাধ্য কিছুই নেই। এই স্তবপাঠের ফলে ধন, ধান্য, পুত্র, পত্নী, ঘোড়া, হাতি প্রভৃতি চতুরঙ্গ সৈন্য বা চতুর্বর্গ ফল এবং অন্তে মোক্ষলাভ করা যায়। প্রথমে কুমারীর পূজা করে মাহেশ্বরীর ধ্যান করে পরম ভক্তিভরে এই অষ্টোত্তর-শতনাম পাঠ ও পূজা করবে। হে দেবী, এভাবে পূজা করলে সকল দেবতার সিদ্ধি লাভ করতে পারবে। রাজারাও তার দাসত্ব করবে। পূজক রাজ্যশ্রী প্রাপ্ত হবে। গোরোচনা, অলক্তক, কুঙ্কুম, সিন্দুর, কর্পূর ও ত্রিমধু একত্র করে তা দিয়ে যন্ত্র এঁকে যথানিয়মে এই যন্ত্র ধারণ করলে সাক্ষাৎ শিবতুল্য হতে পারবে। বুধবার অমাবস্যা তিথিতে রাতে যখন চন্দ্র শতভিষা নক্ষত্রে অবস্থান করবে, সেই সময় স্তব লিখে পাঠ করলে যাবতীয় সম্পদ লাভ করতে পারবে।

বিশ্বতন্ত্রসারে লিখিত দুর্গা-অষ্টোত্তরশতনামের বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত।

0 comments