Friday 13 May 2016

সাহিত্যিক মতি নন্দী


জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ‘কোনি’ ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপটা মনে আছে --- ‘ফাইট কোনি, ফাইট’। কিশোরী তারুকে এ কথাটা বলেই জেতার স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছিলেন তার ট্রেনার। পশ্চিমবাংলার
ক্রীড়াবিদ আর কোচদের কাছে চিরকালের প্রেরণা হয়ে থাকবে কোনির এই সংলাপ। এই
বিখ্যাত সংলাপের লেখক বিখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক মতি নন্দী। শুধু ক্রীড়া সাংবাদিক কথাটা মোটেও
যথেষ্ট নয় মতি নন্দীর জন্য। ১৯৩১ সালের ১০  জুলাই উত্তর কলকাতায় জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি
সাংবাদিক সাহিত্যেও এনেছিলেন এক অন্য স্বাদ। আনন্দ পুরষ্কার পাওয়া এই ঔপন্যাসিক তাঁর ধারালো
গদ্যে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকেও। লস অ্যাঞ্জেলেস ও মস্কো অলিম্পিক, দিল্লি এশিয়ান
গেমস কভার করা এই সাংবাদিক দীর্ঘদিন ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার ক্রীড়া সম্পাদক। তাঁর কোনি, স্টপার, স্ট্রাইকার – এর মতো উপন্যাসগুলো এক দিকে যেমন খুলে দিয়েছে বাংলা ক্রীড়া
সাহিত্যের নতুন দরজা তেমনি সাদা খাম, গোলাপ বাগান,
উভয়ত সম্পূর্ণ, আর বিজলীবালার মুক্তি-র মতো
উপন্যাসগুলোও ঠাই পাবে বাংলা ধ্রুপদী সাহিত্যে।
পাঠকদের একেবারে ভিন্ন লেখার স্বাদ দিয়েছে
তাঁর অবিনাশের সাড়ে আটচল্লিশ, কপিল নাঁচছে,
রেড্ডি, আর অন্ধকার থেকে অন্ধকার
ছোটগল্পগুলোও। ২০১০ সালের ৩ জুলাই তাঁর মৃত্যু
হয়।
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলতেন, মতি নন্দি
লেখকদের লেখক। সন্তোষকুমার ঘোষ
বলেছিলেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সার্থক
উত্তরসূরি। আবার অনেকের কাছে মতি নন্দি চিরকাল
খেলার সাংবাদিক রয়ে গেলেন। ব্যক্তি মতি এ সব
নিন্দে প্রশংসা কোনও দিনই গায়ে মাখেননি।
বলতেন, এক জন লেখক নির্মোহ চোখে
জীবন, তাঁর পরিপার্শ্ব, অভিজ্ঞতা থেকে লেখার
উপাদান খুঁজবে। এ শিক্ষা মতি নন্দি ওঁর সাহিত্যের গুরু
বঙ্কিমচন্দ্রের কাছ থেকে। অন্য এক জায়গায় মতি
নন্দি বলেছিলেন, ‘নিজের সম্পর্কে এটুকু বলতে
পারি অযত্নের লেখা কখনও ছাপতে দিইনি। শুরুতে
বছরচারেক শুধু অনুশীলনই করেছি গল্প
লেখার।... কোনও একটা ব্যাপারে নাড়া খেয়েই বা
সযত্নে প্লট তৈরি করে লিখতে বসা আমার
স্বভাববিরুদ্ধ।’ নিজের চার পাশের সমাজ থেকে
গল্পের উপাদান কুড়িয়েছেন মতি নন্দি পরম মমতায়।
তাঁর প্রায় সব লেখাতেই ব্যক্তি সম্পর্কের
টানাপোড়েন, প্রেম, যৌনতা যেমন এসেছে,
তেমনই সমাজ অর্থনীতি বিবিধ জটিলতাও জায়গা
নিয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, তৃতীয় বিশ্বের
নিরক্ষর দরিদ্র দেশের লেখকদের জনসাধারণের
কাছে দায়বদ্ধ থাকা খুবই জরুরি।
খেলাধূলার বিষয়বস্তু নিয়ে সার্থক সাহিত্য সৃষ্টি খুব
কম দেখা যায়। বাংলা সাহিত্যে তো এ ধরনের লেখা
নেই বললেই চলে। সে দিক থেকে মতি নন্দি
এক অনন্য নজির গড়েছেন।

0 comments