Thursday, 26 May 2016

চন্দ্রঘণ্টা - দুর্গার তৃতীয় রূপ

দেবী চন্দ্রঘণ্টা
দেবী চন্দ্রঘণ্টা
পিণ্ডজপ্রবরারূঢ়া চণ্ডকোপাস্ত্রকৈর্যুতা।
প্রসাদং তনুতে মহ্যং চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা।।

নবদুর্গার তৃতীয় রূপ চন্দ্রঘণ্টা। নবরাত্রি উৎসবের তৃতীয় দিনে তাঁর পূজা করা হয়। দেবীর মস্তকে ঘণ্টার আকারবিশিষ্ট একটি অর্ধ্বচন্দ্র শোভা পায়, তাই দেবীর নাম ‘চন্দ্রঘণ্টা’। অবশ্য তিনি ‘চণ্ডঘণ্টা’ বা ‘চিত্রঘণ্টা’ নামেও পরিচিতা।

দেবী চন্দ্রঘণ্টা সিংহবাহিনী (কাশীর মন্দিরে অবশ্য তিনি ব্যাঘ্রবাহিনী), দশভুজা, দশপ্রহরণধারিনী। তাঁর গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল; পরনে লাল শাড়ি, গায়ে নানাবিধ অলংকার।

মহিষাসুর বধের আগে দেবতাদের সম্মিলিত জ্যোতি থেকে যখন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটল, তখন দেবতারা তাঁকে সজ্জিত করলেন নিজ নিজ অস্ত্রে। ইন্দ্র সেই সময় তাঁর বাহন ঐরাবত হস্তীর গলা থেকে ঘণ্টাটি খুলে নিয়ে তা থেকে আর একটি ঘণ্টা সৃষ্টি করে দিলেন দেবীকে। যুদ্ধকালে দেবী যখন এই ঘণ্টা বাজালেন, তখন অসুরসৈন্যগণ হয়ে পড়ল নিস্তেজ। চণ্ডী-র স্তবে আছে:

হিনস্তি দৈত্যতেজাংসি স্বনেনাপূর্য যা জগৎ।
সা ঘণ্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যোঽনঃ সুতানিব।। (১১।২৭)

(হে দেবী, তোমার যে ঘণ্টার শব্দে দৈত্যেরা নিস্তেজ হয়ে পড়ে, সেই ঘণ্টার শব্দে, মা যেমন করে ছোটো ছেলেদের রক্ষা করেন, তেমনি আমাদের পাপ থেকে রক্ষা করুন।)

কাশীর প্রচলিত প্রবাদ অনুযায়ী, দেবী চণ্ডঘণ্টার পূজা করে তাঁকে প্রসন্ন করতে পারলে যমঘণ্টার (যমের বাহন মহিষের গলায় বাঁধা ঘণ্টা) ধ্বনি পূজককে আর ভয় দেখাতে পারে না। দেবীর কৃপায় মহাপাতকীও পাপ থেকে উদ্ধার পান।

কাশীতে লক্ষ্মী চৌতারার চন্দুনাউয়ের গলিতে দেবী চন্দ্রঘণ্টার মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরটিও ছোটো। দেবীমূর্তিও এখানে হাতখানেক লম্বা। দেবীর পাশে রাখা থাকে একটি বড়ো ঘণ্টা। আর দেবীকে পিছন থেকে ঘিরে থাকে নবদুর্গার অন্য দেবীদের আটটি ছোটো ছোটো মূর্তি। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রি উৎসবের তৃতীয় দিনে এই মন্দিরে প্রচুর লোকসমাগম হয়। কথিত আছে, এই দিন সাধকের মন মণিপুর চক্রে প্রবেশ করে এবং সাধকের দিব্যদর্শন লাভ হয়।

চন্দ্রঘণ্টা পূজার ফল অনেক। তাঁর পূজায় সাধকের বাধাবিঘ্ন ও পাপ বিনষ্ট হয় এবং সকল কষ্ট বিনষ্ট হয়। চন্দ্রঘণ্টার উপাসক দেবীর বাহন সিংহের মতো পরাক্রমী হয়। তাঁর ঘণ্টাধ্বনি সর্বদা চন্দ্রঘণ্টার ভক্তকে সর্ববিধ বিপদ থেকে রক্ষা করে। দেবীর পূজায় পূজকের মন পবিত্র হয়। তাঁর ধ্যান সকল প্রকার কল্যাণ ও সদগতি প্রদান করে।

[ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]

0 comments