Thursday, 26 May 2016

ব্রহ্মচারিণী - দুর্গার দ্বিতীয় রূপ

দেবী ব্রহ্মচারিণী
দেবী ব্রহ্মচারিণী
দধানা করপদ্মাভ্যামক্ষমালাকমণ্ডলু। দেবী প্রসীদতু ময়ি ব্রহ্মচারিণ্যনুত্তমা।।

নবদুর্গার দ্বিতীয় রূপ ব্রহ্মচারিণী। নবরাত্রি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে তাঁর পূজা করা হয়। ‘ব্রহ্মচারিণী’ নামের অর্থ ‘ব্রহ্মচর্য ব্রত অবলম্বনকারিণী’। তিনিই উমা।

দেবী ব্রহ্মচারিণী দ্বিভুজা; একহাতে তাঁর জপমালা, অপর হাতে কমণ্ডলু। দেবী জ্যোতির্ময়ী মূর্তিতে আবির্ভূতা; তাঁর ভৈরব চন্দ্রমৌলীশ্বর।

দেবী ব্রহ্মচারিণীর সম্পর্কে যে পৌরাণিক উপাখ্যানটি প্রচলিত, সেটি গিরিরাজ হিমালয়ের গৃহে জাত দেবী পার্বতীর শিবকে পতিরূপে লাভ করার নেপথ্য-কাহিনি। সতীর দেহত্যাগের পর শিব ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন। তাই সতী যে পুনরায় পার্বতীরূপে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেদিকে খেয়াল ছিল না তাঁর। এদিকে তারকাসুরের অত্যাচারে দেবতারা জর্জরিত। সে বর পেয়েছিল, শিবের পুত্র ভিন্ন অপর কেউই তাকে যুদ্ধে পরাস্ত করতে পারবে। কিন্তু শিব বিবাহের নামটি করছিলেন না। তখন উপায়? অগত্যা নারদ পার্বতীকে তপস্যা করার পরামর্শ দিলেন। নারদের উপদেশ মতো প্রথমে এক হাজার বছর শুধুমাত্র ফলমূল খেয়ে, তারপর একশো বছর শুধু শাক খেয়ে, তারপর কিছুকাল উপবাস করে, তারপর তিন হাজার বছর শুধুমাত্র একটি করে বেলপাতা খেয়ে এবং শেষে কয়েক হাজার বছর নির্জলা উপবাস করে পার্বতী করলেন কঠোর তপস্যা। মা মেনকা দুর্গার তপস্যাক্লিষ্ট শরীর দেখে দুঃখিত হয়ে কন্যাকে নিরস্ত করার জন্য বললেন, “উ মা” (আর না!) সেই থেকে দেবী ব্রহ্মচারিণীর অপর নাম হল ‘উমা’। তাঁর কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা এসে তাঁকে বর দিলেন, “যাঁকে তুমি কামনা করো, সেই শিবকেই পতিরূপে পাবে।“ মহামায়া দুর্গার সেই তপস্বিনী রূপই দেবী ব্রহ্মচারিণী। দেবীপুরাণ মতে, সর্ববেদে বিচরণ করেন বলে দেবী পার্বতীর অপর নাম ‘ব্রহ্মচারিণী’। কাশীতে তাঁকে ‘ছোটি দুর্গাজি’ও (ছোটো দুর্গা) বলা হয়।

রামায়ণ অনুসারে, উমা পর্বতরাজ হিমালয়ের দ্বিতীয়া কন্যা (প্রথমা কন্যা হলেন গঙ্গা)। তিনি তপস্বিনীর জীবন যাপন করতেন। হরিবংশ মতে, হিমালয়ের ঔরসে মেনকার গর্ভে তিন কন্যার জন্ম হয়–অপর্ণা, একপর্ণা ও একপাটলা। এঁরা তিন জনই কঠোর তপস্যা করেছিলেন। একপাটলা একটি মাত্র নাগকেশর ফুল খেয়ে, একপর্ণা একটি মাত্র পাতা খেয়ে এবং অপর্ণা কিছু না খেয়ে তপস্যা করেন। অপর্ণার এহেন কঠোর তপস্যায় বিচলিত হয়ে তাঁর মা মেনকা তাঁকে বলে বসেন, ‘উ মা!’ (আর না!) সেই থেকে দেবী অপর্ণার পরিচিতা হন ‘উমা’ নামে। তিন বোনের মধ্যে উমাই ছিলেন শ্রেষ্ঠা; তিনি পতিরূপে লাভ করেন মহাদেবকে। তবে মনে হয়, তিন বোনের তপস্যার এই কাহিনি থেকেই বাংলা লৌকিক ছড়ায় শিব ঠাকুরের বিয়েতে তিন কন্যা দানের প্রসঙ্গটি এসেছে। আবার, তন্ত্রমতে, যে দেবী ব্রহ্মের প্রতিনিধিস্বরূপ দেবতাদের দর্পচূর্ণ করতে গিয়েছিলেন, তাঁরও নাম উমা হৈমবতী।

কাশীর (বারাণসী) দুর্গাঘাটের কাছে রয়েছে দেবী ব্রহ্মচারিণীর মন্দির। মন্দিরটি বেশ ছোটো। দেবীপ্রতিমার উচ্চতাও হাত খানেক। তবে পূর্বমুখী এই মূর্তির মুখে সোনার মুখোশ লাগানো থাকে। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রি উৎসবে দ্বিতীয় দিনে এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়।

দেবী ব্রহ্মচারিণী ব্রহ্মজ্ঞান প্রদান করেন। তাঁর পূজা করলে শুধু সংযম ও মানসিক শক্তিই বৃদ্ধি পায় না, সাধক অনন্ত পুণ্যফলও লাভ করেন এবং তিনি সর্বদা সিদ্ধি ও বিজয়ও লাভ করেন। নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে সাধক নিজের মনকে স্বাধিষ্ঠান চক্রে স্থিত করে ব্রহ্মচারিণীর পূজা করেন।

[ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]

0 comments