Tuesday 31 May 2016

অজানা রবীন্দ্রনাথ, পড়ুন, ভালো লাগবে।

Rabindranath Tagore

বীন্দ্রনাথকে আমরা শুধুই বাংলা সাহিত্যের পথ প্রদর্শক বলেই জানবো ? তিনি কি শুধুই একজন কবি ? ঔপন্যাসিক ? নাট্যকার ? গীতিকার ? না এর বাইরেও ছিল তার প্রাণোছ্বল এক সত্তা। শারদোৎসবের ঠাকুরদাদাকে মনে আছে ? তিনি তো রবীন্দ্রনাথেরই আর এক সত্তা।

[১] শান্তিনিকেতনে জমজমাট আসর বসেছে। কবির ঘরে আছেন অনেক লোক। ইতিমধ্যে গুরুদেবের তলব পেয়ে দ্বিধাগস্থ নেপাল রায় মহাশয় (শান্তিনিকেতনের তৎকালীন অধ্যাপক) কবির কাছে উপস্থিত হলেন। কবি তার দিকে তাকিয়ে গম্ভীরভাবে বললেন
"নেপালবাবু, আজকাল আপনার ভুল হচ্ছে বিস্তর, এ ভালো কথা নয়। আপনাকে দন্ড পেতে হবে।" এরপর তিনি নিজের ঘরে গেলেন। নেপাল বাবু ভাবনায় পড়ে গেলেন। হয়তো তার অগোচরে কোন ভুল হয়েছে যার জন্য কবি তাকে শাস্তি দিতে চান। ঘরে উপস্থিত আর সকলেরও উৎকণ্ঠা । এমন সময়ে সকলের উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে কবি একটি লাঠি হাতে আবির্ভূত হলেন। সকলের চোখে মুখে চাপ। ঘরে এসেই কবি নেপাল বাবুকে বললেন "এই নিন আপনার দণ্ড, কাল আপনি ভুল করে ফেলে গেছিলেন"। সকলে তখন স্বস্তি পেলেন।

[২] কবি অক্ষয় চৌধুরী ও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাল্যবন্ধু। অক্ষয় চৌধুরী ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে খুবই আলোচনা করতেন। একদিন রবীন্দ্রনাথ কৃত্রিম গোঁফ দাড়ি লাগিয়ে পার্শি সেজে অক্ষয়চন্দ্রের কাছে এসে বললেন তিনি বোম্বাই থেকে এসেছেন, ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে। অক্ষয়চন্দ্র স্বীকৃত হলেন। আলোচনা চলছে এমন সময় স্যার তারকনাথ পালিত এসে উপস্থিত। তিনি এসেই রবীন্দ্রনাথের মাথায় এক চাপড় মেরে বললেন "এ কি রবি!!" অক্ষয়চন্দ্র বোকার মত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। দিনটা ছিল ১ এপ্রিল।

[৩] রবীন্দ্রনাথ পিঠে পুলি খেতে বেশ ভালোবাসতেন। শান্তিনিকেতনের এক ভদ্রমহিলা কবিকে একদিন পিঠে তৈরী করে কবিকে পাঠিয়ে দিলেন। কয়েকদিন পরে তিনি কবিকে জিজ্ঞেস করলেন 
"গুরুদেব, সেদিন যে পিঠে দিয়েছিলুম তা কেমন খেলেন?" কবির সরস জবাব 'লোহা কঠিন, পাথর কঠিন আর কঠিন ইস্টক তার অধিক কঠিন কন্যে তোমার হাতের ইস্টক'।

[৪] শান্তিনিকেতনে কোন এক বিশিষ্ট ব্যক্তির আগমনে কবি গরদের ধুতি চাদর পড়েছিলেন। তার ঐ বেশে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী তাকে বলেছিলেন, ঐ ধুতি চাদরে আপনাকে বেশ মানাচ্ছিল। আপনি কেন ধুতি পড়েন না ? কবি বললেন, "কত ল্যাঠা, কে কোঁচায় ? কে পাট করে, সেই দুঃখেই তো বালিশের ওয়াড়গুলো পড়ে থাকি।

[৫] জোড়াসাঁকোর বাড়িতে প্রতি সপ্তাহেই সাহিত্যের আসর বসত। আসর ভঙ্গের পর দেখা যেত প্রায়ই কারো না কারো জুতো হারাত। সকলেই জুতো হারানোর ভয়ে থাকত। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তো ছেঁড়া জুতোই পায়ে দিয়ে আসতে লাগলেন। কিন্তু শরতচন্দ্র যখন শুনলেন জুতো হারানোর কথা, তিনি জুতো ভিড়ের মাঝে না রেখে কাগজে মুড়িয়ে নিজের সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হলেন রবীন্দ্রনাথের সামনে। কিন্তু শরৎচন্দ্রের এই কীর্তি দেখেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ। তিনি রবীন্দ্রনাথকে সব বলে দিয়েছিলেন। এরপর একদিন কবি শরৎচন্দ্রকে জিজ্ঞেস করলেন-
'শরত ওটা কি ?'
শরতচন্দ্র বললেন "ও কিছু না, একটা জিনিস'
কবিগুরু জানতে চাইলেন ' কি জিনিস ? কোন বই টই নাকি ?"
শরতচন্দ্র ইতস্তত করে "আজ্ঞে..'
কবিগুরু বললেন "কি বই শরত ? পাদুকা পুরাণ বুঝি !!"
শরৎচন্দ্র অবাক।

[৬] রবীন্দ্রনাথ তাঁর গান রচনা শেষ করেই দাক পারতেন "অমলা শিগগির এসো, শিখে নাও, এক্ষুনি ভুলে যাবো" । মৃণালিনী দেবী বলতেন "এমন মানুষ কখনো দেখেছ অমলা যে নিজের দেওয়া সুর ভুলে যায় ?'
রবীন্দ্রনাথ হেসে জবাব দিতেন 
"অসাধারণ মানুষের সবই অসাধারণ হয়... "


সত্যি, অসাধারণ এই মানুষটিকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।

0 comments