Sunday 5 June 2016

ভাদু উৎসব


ভাদু, বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি বিশেষ অঙ্গ। ভাদু গান বা ভাদু নাচ বাংলার পুরুলিয়া, বর্ধমান, বীরভূম এবং বাংলার বাইরে ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে প্রচলিত। এই নাচ গানের রীতি বছরের ভাদ্র মাসেই বাংলার গ্রামে গঞ্জে দেখা যায় ।

প্রেক্ষাপটের কাহিনী ও ঐতিহাসিকতাঃ

ভাদু উৎসব নিয়ে মানভূম অঞ্চলে কিছু লোককথা প্রচলিত রয়েছে। জনশ্রুতিতে আছে পঞ্চকোট রাজপরিবারের নীলমণি সিংদেওর তৃতীয়া কন্যা ভদ্রাবতীর বিবাহ স্থির হওয়ার পর তাঁর ভাবী স্বামীর অকালমৃত্যু হয় এবং তিনি মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নাকি আত্মহত্যা করেন।

আবার এরকমও শোনা যায়, বিয়ে করতে আসার সময় ভদ্রাবতীর হবু স্বামী ও তাঁর বরযাত্রী ডাকাতদলের হাতে খুন হলে ভদ্রাবতী চিতার আগুনে প্রাণ বিসর্জন করেন বলে । ভদ্রাবতীকে জনমানসে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নীলমণি সিংদেও ভাদু গানের প্রচলন করেন। 
কিন্তু এই কাহিনীগুলি ঐতিহাসিক ভাবে সত্য তা বলা যায় না। কেননা এ বিষয়ে যথার্থ প্রমাণের অভাব রয়েছে। রাখালচন্দ্র চক্রবর্তীর 'পঞ্চকোট ইতিহাস' নামক গ্রন্থে এই ধরণের কোন ঘটনার কথা পাওয়া যায়না।

রেওয়াজ বা রীতিঃ 

পয়লা ভাদ্র কুমারী মেয়েরা গ্রামের কোন বাড়ীর কুলুঙ্গী বা প্রকোষ্ঠ পরিষ্কার করে ভাদু প্রতিষ্ঠা করেন। একটি পাত্রে ফুল রেখে ভাদুর বিমূর্ত রূপ কল্পনা করে তাঁরা সমবেত কন্ঠে ভাদু গীত গেয়ে থাকেন। ভাদ্র সংক্রান্তির সাত দিন আগে ভাদুর মূর্তি ঘরে নিয়ে আসা হয়। ভাদ্র সংক্রান্তির পূর্ব রাত্রকে ভাদুর জাগরণ পালিত হয়ে থাকে। এই রাত্রে রঙিন কাপড় বা কাগজের ঘর তৈরী করে এই মূর্তি স্থাপন করে তার সামনে মিষ্টান্ন সাজিয়ে রাখা হয়। এরপর রাত নয়টা বা দশটা থেকে ভাদু গীত গাওয়া হয়। কুমারী ও বিবাহিত মহিলারা গ্রামের প্রতিটি মঞ্চে গেলে তাঁদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ও তাঁরা এই সব মঞ্চে ভাদু গীত পরিবেশন করে থাকেন। ভাদ্র সংক্রান্তির সকালে দলবদ্ধভাবে মহিলারা ভাদু মূর্তির বিসর্জন করা হয়।
আবার বীরভূমে এই ভাদু গান একটু অন্যরকম ভাবে পালিত হয়। এই অঞ্চলে মহিলাদের অংশগ্রহণ থাকে না। মূল গায়েনকে অনুসরণে পুরুষদের দল ঢোল, হারমোনিয়াম, তবলা, কাঁসি প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র সহযোগে ভাদু গীত গাইতে গাইতে মূর্তি বিসর্জন করেন।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

0 comments